বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে সবচেয়ে বেশি বিপদে তারাই পড়বেন- যারা মধ্যবিত্ত। কারণ, সাধারণত সরকারি হোক বা বেসরকারি, যতটুকুই হোক না কেন- বগুড়ার শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেসব সাহায্যমূলক খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী ‘করোনা’ মোকাবিলায় বিতরণ করা হচ্ছে তার সবটুকুই অসহায় ও কর্মহীন দরিদ্রদের মধ্যে। মধ্যবিত্তরা কিন্তু নিজেদের মর্যাদা বা শ্রেণি বজায় রাখতে নীরবে আছেন। কারণ তাদের ইচ্ছে থাকলেও পারছেন না ফটোসেশন করে সরকারি বা উচ্চবিত্তদের কাছ থেকে ত্রাণ গ্রহণ করতে। অন্যদিকে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকায় পারছেন না জমানো যত সামান্য পুঁজি দিয়ে আগামী কয়েকদিনের জন্য খাদ্যসামগ্রী মজুত করতে। বর্তমান সময়ে মানুষের মৌলিক ৬টি চাহিদার মধ্যে ৪টি নিয়েই চিন্তিত এই মধ্যবিত্তরা, যেমন- খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা। হয়তো এখনো মধ্যবিত্তদের অবস্থা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও অচলাবস্তা দীর্ঘায়িত হলে সবচেয়ে বিপদে এরাই পড়বেন বলে মনে করছেন চিন্তাশীল মহল। বর্তমান অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে হয়তো টিসিবির পণ্য ক্রয় করার মতো টাকাও থাকবে না মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের কাছে। স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য জুটানোই কঠিন হয়ে পড়েছে, তার ওপরে আবার চিকিৎসা ও শিক্ষার বিষয় তো থাকছেই। কারণ তারা (মধ্যবিত্তরা) মনে করছেন বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে পরিবারের যে কোনো ব্যক্তির সংকটপূর্ণ চিকিৎসা করানোর সাধ্যও থাকবে না তাদের। তারা বলছেন, এই লকডাউনে কাটানো সময়গুলো প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি তাদের সব ধরনের টাকা প্রদান বা বেতন মওকুফ না করে তাহলে হয়তো অনেক পরিবারই তাদের সন্তানদের স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করানোর সক্ষমতা হারাবেন। যার ফলে দেশ শিক্ষা খাতে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাদের চিন্তা কিভাবে তারা এই দীর্ঘ সময়ের এই রকম অবস্থা থেকে নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করবেন? এই ক্ষেত্রে প্রতিটি মধ্যবিত্তদের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী তাদের সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান সামাজিক সুযোগ-সুবিধাকেও বিচারের মাপকাঠিতে আনতে হবে। তবে বগুড়া জেলার শেরপুরের উলেস্নখযোগ্য অংশই নিম্নমধ্যবিত্ত। এরা বেশির ভাগই ছোট বেসরকারি চাকরি, ছোট ব্যবসা ও বিভিন্ন ধরনের দৈনন্দিন কাজের ওপর নির্ভরশীল। শেরপুর উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার সুজন কুমার জানিয়েছেন, ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী শেরপুর উপজেলায় মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকসংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭২ জন। তবে মধ্যবিত্তদের বর্তমান কোনো পরিসংখ্যান নেই। মধ্যবিত্তরা বলছেন, আমরা সবসময়ই চাপে থাকি। রাজনীতিবিদরা ভোটের কারণে নিম্নবিত্তদের গুরুত্ব দেন। আবার একই কারণে বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক সাপোর্ট পাওয়ার জন্য সম্পদশালীদের গুরুত্ব দেন। কিন্তু মধ্যবিত্তরা কখনোই মূল্যায়িত হয় না। তাই আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানও নেই। তারা বলছেন, করোনা দুর্যোগে উচ্চবিত্তরা ত্রাণ দিচ্ছেন, নিম্নবিত্তরা ত্রাণ নিচ্ছেন, আর আমরা শুধু ঘন ঘন হাত ধুয়েই করোনা মোকাবিলার চেষ্টা করছি। শেরপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ওবাইদুল হক জানিয়েছেন, শেরপুর উপজেলায় আমরা প্রায় ১৭ হাজার লোককে বিভিন্ন ধরনের ভাতা দিয়ে থাকি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এই ভাতার আওতাভুক্তদের ৮০ ভাগই হতদরিদ্র। তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি সমাজকল্যাণ পরিষদ থেকে প্রতি উপজেলার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে করোনা মোকাবিলায় অনুদান দেওয়া হবে- যা প্রতিবন্ধী ও হতদরিদ্রদের জন্য। এই অনুদানে যারা সরকারি অন্য কোনো ভাতার আওতায় নেই তাদেরই প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। করোনার উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে মধ্যবিত্তদের মৌলিক চাহিদার বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না এমন কথার জবাবে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, আপাতত আমরা সরকারের নির্দেশে কর্মহীন ও নিম্নবিত্তদের তালিকা প্রস্ততের মাধ্যমে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছি এবং সরকারি পরবর্তী নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মজিবর রহমান মজনু বলেন, এইটা অবশ্যই স্বাভাবিক যে মধ্যবিত্তরা বিপদে আছে। মধ্যবিত্তদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা না পেলে আসলে এই শ্রেণির মানুষকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব নয়। এই শ্রেণির মানুষকে সাপোর্ট দিতে হলে এদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনতে হবে এবং এর জন্য দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।